এক যুগ আগেও এ নদীতে সাম্পান চলাচল করতো কমপক্ষে দুই হাজার

হাজার বছরের ঐতিহ্য চট্টগ্রামের সাম্পান

সাম্পান চট্টগ্রামের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আঙিনার প্রোজ্জল এবং দেদীপ্যমান একটি নাম। সাম্পান কর্ণফুলী নদীর হাজার বছরের ঐতিহ্যও বটে।

বিশেষ প্রতিনিধি
১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ এ ১৯:১৪
হাজার বছরের ঐতিহ্য চট্টগ্রামের সাম্পান

ছবি : সংগৃহীত


প্রতিটি জেলা কিংবা স্থানের নিজস্ব ঐতিহ্য, স্মারক, স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতা থাকে। তদুপরি ‘চট্টগ্রাম’ নিজেও নানা অভিধা-বিশেষণে বিশেষায়িত। এর মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্য-স্মারক হিসাবে স্বীকৃত ‘সাম্পান’। চট্টগ্রামে সাম্পানকে নৌকাও বলা হয়। সাম্পান বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের স্মারক। প্রচলন আছে যে, কর্ণফুলী নদীতে একসময় যাত্রীবাহী জাহাজ ও স্টিমার চলাচল করতো। জাহাজ থেকে নেমে যাত্রীরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে কূলে ওঠার জন্য এটির যাত্রা শুরু। এটি পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।

চট্টগ্রাম নিয়ে প্রাচীনকাল থেকে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে- ‘সাম্পান, শুঁটকি, দরগা-এ নিয়ে চাটগাঁ’। এটির সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীর জীবন-জীবিকার সম্পর্কও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাম্পান চট্টগ্রামের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আঙিনার প্রোজ্জল এবং দেদীপ্যমান একটি নাম। সাম্পান কর্ণফুলী নদীর হাজার বছরের ঐতিহ্যও বটে।

কর্ণফুলী নদীতে কি পরিমাণ সাম্পান চলাচল করে তার কোন পরিসংখ্যান জানা যায়নি। তবে সাম্পানের কয়েকজন মাঝির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক যুগ আগেও এ নদীতে সাম্পান চলাচল করতো কমপক্ষে দুই হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে হয়েছে কয়েকশ’।

গবেষক আলীউর রহমান বলেন কর্ণফুলীর সাম্পান চট্টগ্রামের আড়াই হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করে। সেই ঐতিহ্য রক্ষা এবং সেটাকে আরো সুদৃঢ় করতে যে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছি তা অব্যাহত রাখব। নদীর দু’ধারে নতুন নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে মানুষের মধ্যে নদী নির্ভরতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে এ নদীর ঐতিহ্য সাম্পান এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এতে অনেকে মাঝি পেশা পরিবর্তন করেছে।

চট্টগ্রামে সাম্পানকে উপজীব্য করে সমৃদ্ধ হত অর্থনীতি। সঙ্গে উৎকর্ষতা লাভ করেছে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেও। রচিত হত নানা রূপকথার গল্প, নাটক ও গান। সঙ্গে শিল্পীর তুলির আঁচড়ে নানাভাবে চিত্রিত হয়েছে বর্ণিল সাম্পান। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সাম্পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোগোতে ধারণ করে চট্টগ্রামে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনুপম স্মারক হয়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। 

কর্ণফুলী নদী ঐতিহ্য প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম জানান, ‘কর্ণফুলী নদীর বর্তমান যে বিবর্ণ অবস্থা তা অতীতে ছিল না। অতীতে চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত জাহাজ রপ্তানি হতো সারা বিশ্বে।’ সাম্পান ইতিহাস থেকে জানা যায়, সপ্তদশ শতকে তুরস্কের সুলতানের নৌ বহরের অধিকাংশ জাহাজ নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।

একবার এক আদেশে সুলতান চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৩টি জাহাজ ক্রয় করেছিলেন। বৃটিশ নৌ বহরেও চট্টগ্রামে নির্মিত জাহাজের প্রাধান্য ছিল। ১৯২৪ সালে কলকাতা বন্দরে ১১টি বৃটিশ জাহাজের মধ্যে ৮টিই ছিল চট্টগ্রামের তৈরি। ১৯০০ শতকে চট্টগ্রামে এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ তৈরি হতো।

সিজার ফ্রেডারিক লিখেছেন প্রতিবছর চট্টগ্রাম থেকে ২৫ থেকে ৩০টি জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। চট্টগ্রামের তৈরি জাহাজ আলেকজেন্দ্রিয়ায় তৈরি জাহাজের চেয়ে উন্নত ছিল। জার্মানির ব্রেমার হ্যাভেন জাদুঘরে এখনও চট্টগ্রামের তৈরি জাহাজ প্রদর্শনীর জন্য রক্ষিত আছে। এই ক্ষুদ্র রণতরীটি ১৯১৮ সালে নির্মিত হয়েছিল।

 

-পার্বত্য সময় 


সংবাদটি শেয়ার করুন

মন্তব্য


আপনাকে মন্তব্য করতে হলে লগইন করতে হবে

চট্টগ্রাম কাটাগরির আরও খবর পড়ুন

ad